বিবিএন ডেস্ক: বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা চত্বরে লাগানো ফুলগাছের পাতা খেয়েছে ছাগল। এই অপরাধে ছাগলকে ধরে ‘মালিকের অনুপস্থিতিতে’ ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করা হয়েছে ২ হাজার টাকা। সেই টাকা পরিশোধ না করায় ছাগলটিকে ‘বিক্রি করে’ আদায় করা হয়েছে জরিমানা। বগুড়া আদমদীঘি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সীমা শারমিনের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করেছেন ছাগলের মালিক সাহারা বেগম (৪৯)।
তবে ছাগল বিক্রি করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও সীমা শারমিন। তিনি বলেন, ‘ছাগল বিক্রি করা হয়নি। বর্তমানে ছাগলটি একজনের জিম্মায় রাখা হয়েছে। ৯ দিন ধরে ছাগলকে খাওয়াতে হচ্ছে।’
জানা গেছে, ছাগলের মালিক সাহারা বেগম উপজেলা পরিষদের পাশেই বাস করেন। তার স্বামী ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন।সাহারা বেগম বলেন, ‘গত ১৭ মে থেকে ছাগলটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে জানতে পারি ছাগলটি উপজেলায় আটকে রাখা হয়েছে। সেদিনই আমি ছাগল আনতে গেলে ইউএনও আমার সঙ্গে দেখা করেননি। তিন দিন পরে ইউএনওর কাজের মেয়ে আমাকে খবর দেয় যে আমার দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দুই হাজার টাকা দিয়ে আমি যেন ছাগল নিয়ে আসি।’
তিনি বলেন, ‘দুই হাজার টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। আমি এর পরে বহুবার উপজেলায় গেছি কিন্তু আনসার সদস্যরা আমাকে বলেছেন যে স্যার (ইউএনও) ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। টাকা দিয়ে ছাগল নিয়ে যেতে হবে। এরপরেও আমি গেছি, কিন্তু আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে।’
ছাগলের মালিক আরও বলেন, ‘আমার আর্থিক অবস্থা ভালো না। ছাগল ফেরত পাওয়ার আশায় আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের গেলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে ছাগল ফেরত নিয়ে দিবেন। পরে আমি জানতে পারি যে স্থানীয় একজনের কাছে ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। আমি গরিব মানুষ। ছাগল ফিরে না পেলে কিছুই করার সাধ্য নাই। আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম।’
এ ব্যাপারে আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম রাজু খান বলেন, ‘ওই ছাগলের মালিক অভিযোগ করেছেন যে তার ছাগল গত কয়েকদিন ধরে আটকে রেখেছে।’
সাহারা বেগম বলেন, ‘ছাগলটি সরকারি খড়ে দিলে ৫০ বা ১০০ টাকা দিয়ে ফেরত আনতে পারতাম। কিন্তু জরিমানা করেছে দুই হাজার টাকা। এত টাকা কোথায় থেকে দেব?’ তার সামনে কোনো জরিমানা করা হয়নি বলেও জানান সাহারা বেগম।
এ বিষয়ে ইউএনও সীমা শারমিন বলেন, ‘ফুলগাছ খাওয়ায় জন–উপদ্রব আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনেকবার ছাগলের মালিককে ডেকেছি কিন্তু তিনি আমার কাছে আসেননি। এ কারণে সংশ্লিষ্ট আইনে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
ছাগল বিক্রি করার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও বলেন, ‘ছাগল বিক্রি করা হয়নি। বর্তমানে ছাগলটি একজনের জিম্মায় রাখা হয়েছে। ৯ দিন ধরে ছাগলকে খাওয়াতে হচ্ছে। একাধিকবার ওই ছাগল বাগানের ফুলগাছ খেয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, ‘যেকোনো বিষয় গণ উপদ্রব সৃষ্টি করলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে। আমি যতটুকু শুনেছি, ছাগল মালিকের উপস্থিতেই এই জরিমানা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।’
মালিকের অনুপস্থিতিতে ছাগল বিক্রি করে জরিমানা আদায় করা যায় কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ছাগলটি বিক্রি করা হয়েছে কি না সেটা আমার জানা নেই। তবে কেউ জরিমানার টাকা দিতে না পারলে জব্দকৃত মালামাল বিক্রি করে সেই টাকা আদায়ের বিধান আছে।’